Friday 1 September 2017

আক্রান্ত রোহিঙ্গা হিন্দু, নেপথ্যে কি রোহিঙ্গা মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীরা?




ওয়েবডেস্কঃ- কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের কক্স-বাজারে আশ্রয় নিয়েছে প্রায়ে ৫০০ জনের মতো রোহিঙ্গা হিন্দুদের একটি দল। এই প্রথমবার রোহিঙ্গা হিন্দু শরণার্থী দেখা গেল। যানা গিয়েছে ২-৩ দিন আগেই ওদের গ্রামে একদল মানুষ এসে আক্রমণ করেছে। মেরেছে, লুঠপাট চালিয়েছে, সব কিছু আগুনে জালিয়ে তছনছ করে দিয়েছে। কিন্তু কারা এই নিরীহ শান্তিপ্রিয় হিন্দুদের আক্রমণ করলো? আর কেনই বা করলো? প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পাওয়া গেলেও সন্দেহের তীর কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলিমদের দিকেই উঠছে।

  বিবিসি বাংলা-র রিপোর্ট অনুযায়ী, হামলাকারীদের চিনতে পেরেছিলেন কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে বকুলবালা নামোক এক নিরীহ শান্তিপ্রিয় রোহিঙ্গা হিন্দু শরণার্থী বলেন, কালো পোশাকে আবৃত থাকায় তাদের ভালো ভাবে চেনা যাচ্ছিল না। "কালো কালো পোশাক পরে ওরা এসেছিল। চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। চিনতে পারিনি। ওরা কাটছিল, মারছিল, গুলি করছিল। সবাইকে মেরে ফেলেছে। ওরা বাংলা ভাষাতে কথা বলছিল, মাঝে মাঝে বার্মিজ ভাষাতেও বলছিল। ওদের হাতে অনেক ধারালো অস্ত্র ছিল। চিকনছড়িতে যখন ওরা এসে পৌছায়, তার আগেই আমরা পালিয়ে যাই"। শিবকুমার নামে আরেকজন জানিয়েছেন, তার মা বাবা পরিবারের সবাইকে ঐ হামলাকারীরা মেরে ফেলেছে। যদিও এই হামলার পর, ঐ অঞ্চল থেকে মায়ানমারের সেনা ৪০০০ হিন্দু ও বৌদ্ধ পরিবারকে নিরাপদ জায়েগাতে সরিয়ে নিয়ে গেছে।

  মায়ানমার সরকারের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথক আর একটি ঘটনাতে তিন শিশু সমেত মোট ছয়জন নিরীহ শান্তিপ্রিয় রোহিঙ্গা হিন্দুদের খুন করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী,"বারোজন হিন্দুদের একটি দল ব্যবসা সেরে মুংটাও টাউনশিপ থেকে মুংটাও-তে নিজেদের ঘরে ফিরছিল। ঠিক সেই সময়ই দুষ্কৃতীদের একটি দল তাদের নির্মীয়মাণ একটি বিল্ডিং-এ ঢুকিয়ে গুলি করে। ঐ ঘটনায়ে ২ জন পুরুষ, ১ জন নারী ও ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ২ জন নারী গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, ৪ জন শিশু পালাতে সক্ষম হলে ৪-৫ মাইল দূরে সেনারা তাদের উদ্ধার করে।"

  যেনে রাখা উচিৎ মায়ানমারে সরকারের তরফ থেকে হিন্দুদের শত্রু বলে চিহ্নিত করা হয়েনি, বৌদ্ধ-দের মত হিন্দুদেরও সমান ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। হিন্দুরা ঐ দেশের সরকার এবং সংবিধান স্বীকৃত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, কারণ রোহিঙ্গা মুসলমানদের মতো হিন্দুরা কোনদিনই ধর্মের নামে মায়ানমারকে টুকরো করে আলাদা দেশের দাবি করেনি। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ধর্মীয় কারনে দেশভাগের দাবিতে সায়ে নেই রোহিঙ্গা হিন্দুদের। মায়ানমারের জাতীয়তাবাদীরা এই জন্য কোনদিনই হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোন রকমের অভিযান চালায়েনি, উলটে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ওদের সম্পর্ক ভালো।

  এমতাবস্থায়ে নিরীহ শান্তিপ্রিয় রোহিঙ্গা হিন্দু হত্যায়ে পুরো সন্দেহের তীরটাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের দিকে। এর কারণ হিসাবে যে যুক্তি গুলো উঠে এসেছে তা হল,
  • হিন্দু মেরে রোহিঙ্গা মুসলিমরা ভারত সরকারকে মায়ানমারের পাশে থাকার জন্য হুঁশিয়ারি দিতে পারে।
  • এই ঘটনা মায়ানমার সরকার করেছে বলে প্রমাণ করলে ভারত রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পাশে দাঁড়াবে এই আশা রাখতে পারে।
  • হিন্দু বিধর্মী-মুক্ত রাখাইন করলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ধর্মীয়রাষ্ট্র(পাকিস্তানের মতো) তৈরির আন্দোলন বেশ কিছুটা সফলতা পাবে।
যে যে কারণে মনে করা হচ্ছে মায়ানমারের সেনা বা জাতীয়তাবাদীরা এই কাজ করেনিঃ-
  • ঘটনার দুই দিন আগেই ভারত সরকার ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে মায়ানমারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।
  • ভারত পাশে তাই মায়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের হিন্দু হত্যা করার কোন কারণই নেই। তাছাড়াও হিন্দুরা কোনদিনই মায়ানমারের জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে যায়েনি।
  • হিন্দুরা ঐ দেশের সরকার এবং সংবিধান স্বীকৃত একটি নিরীহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী(রোহিঙ্গা মুসলিমদের কিন্তু ঐ দেশের নাগরিকত্তই নেই)।
  • তবে সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে, আততায়ীরা বাংলাতে কথা বলছিল আর আইএস জঙ্গিদের মতো পোশাক এবং কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা ছিল। 
   মায়ানমারের জাতীয়তাবাদীরা ঐরকম পোশাক পরে না, ঐ দেশের সেনার পোশাক আইএস জঙ্গিদের মতো-ও না। তাছাড়া মুংটাও-র ঘটনার পর শিশুদের সেনারাই উদ্ধার করেছে এবং আহত মহিলাদের সরকারি হাস্পাতালেই চিকিৎসা চলছে। মায়ানমারের সেনা বা জাতীয়তাবাদীরা এই কাজ করে থাকলে, ওরা কোনদিনই সাক্ষী দেওয়ার জন্য ওদের বাঁচিয়ে রাখতো না। তাই খুব পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে এই কাজ মায়ানমারের সেনা বা মানুষে কিন্তু করেনি।

1 comment:

  1. এরা রোহিংগা হিন্দু নয় ,এরা বাঙালি হিন্দু। They speak the Bengali dialect of Chittagong.রোহিঙ্গা রা নিজেদের বাঙালি বলে না ,আরবি ক্যালেন্ডার মানে কিন্তু একই আঞ্চলিক ভাষার হিন্দু গুলো বাঙ্গালি বলে পরিচয় দেয়।

    ReplyDelete

loading...
loading...