Sunday 3 September 2017

ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম দেশের আরব সংস্কৃতি বর্জন



ওয়েবডেস্ক : বিভিন্ন বিতর্কের সময় দেখা গেছে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের কাছে অনেকেই প্রশ্ন করেন, একটা মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ ধর্মনিরপেক্ষ দেশের নাম বলার জন্য। প্রায়ে প্রতিবারই উত্তর দিতে অসমর্থ হয়ে সেই মুসলমান মানুষটি। কারণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের দেশ খোঁজা, আর খড়ের গাঁদা থেকে ছুঁচ খোঁজা দুটোই প্রায়ে সমার্থক। পৃথিবীতে ৫০-র বেশি মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ থাকলেও, ঐ সব দেশের মধ্যে অধিকাংশ দেশের সংবিধান ধর্মনিরপেক্ষ নয়। ইরান সৌদির মত গোঁড়া মুসলিম দেশ-তো, বিধর্মীদের ধর্মচর্চার সাংবিধানিক অধিকার টুকুও দেয় না। তবে মুসলিম মানুষদের নিরাশ হওয়ার কিছুই নেই। সংখ্যাতে অতি সামান্য হলেও কিছু মুসলিম দেশ আজও রয়েছে যারা ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান তৈরি করেছে নিজের দেশের মানুষদের জন্য।

  এই রকমই একটা দেশ হল তাজিকিস্তান। ইস্টার্ন-টার্কিক বা প্রাচ্য তুর্কীদের একটি শাখা হল এই তাজিকরা। ভারতের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত এই দেশ। মহাভারতেও এই জনজাতীর উল্লেখ রয়েছে। মাত্র হাজার বছর আগে অবধিও এই অঞ্চলের মানুষদের ধর্ম-সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতির কোন পার্থক্যই ছিল না। হিন্দু, বৌদ্ধ, পারসি ধর্ম ছিল এই অঞ্চলের প্রধান ধর্ম। এমনকি ভারতীয়দের মতন নামও হত ওখানের বিভিন্ন অঞ্চলের। ১০০০ বছর ধরে মুসলিম ও পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলে মধ্যএশিয়া থাকলেও ওদের অনেকেই আজও ভোলেনি প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির পরধর্মসহিষ্ণুতা-কে। মনেরাখা ভাল মধ্য এশিয়ার পূর্বপ্রান্ত অর্থাৎ তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান, কিরঘিজস্থান তথা চিনের পশ্চিমাঞ্চলের মুসলিম জনজাতি পৃথিবীর অন্য যে কোন অঞ্চলের মুসলিমদের থেকে কম কট্টরপন্থী এবং মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ অঞ্চল হওয়া সত্যেও খুব কম লোক আরবের সংস্কৃতি উগ্র ও বর্বর দিক গুলো মেনে চলে।


  যদিও শেষ কয়েক বছরে এই অঞ্চলের কিছু কিছু অংশে আরবীয় কট্টরবাদী ইসলামের বিস্তার চোখে পড়ছে। তাই এই কট্টরবাদকে শেষ করতেই উদ্যোগী হয়েছে তাজিকিস্তান প্রশাসন। ঐ দেশের সরকার পুরুষদের আরবি কায়েদাতে দাড়ি এবং নারীদের হিজাব নিষিদ্ধের পর তাজিকিস্তানে এবার আরবী নাম রাখা নিষিদ্ধ করছে। বৃটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ান’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমোন আরবি নাম নিষিদ্ধ করতে একটি আইন পাসের জন্য পার্লামেন্টকে আদেশে দিয়েছেন। রুশ সংবাদ সংস্থা ‘ইন্টারফ্যাক্স’কেও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাজিকিস্তান আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।

প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমোন
   শিশুদের জন্মনিবন্ধনের সময় যদি তাদের আরবী নাম দেখা যায়, তা পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আদেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি প্রাপ্ত বয়স্কদেরও আবেদন করে জানানো হয়েছে আরবি নাম বদলে ফেলার জন্য(যদিও ঐ দেশের বেশির ভাগ প্রাপ্ত বয়স্কের আরবি নাম নেই)। প্রেসিডেন্টের আদেশ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়, আরবী নাম তথা সংস্কৃতি প্রতিহতের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সেদেশের প্রশাসন। ২০১৭-র এপ্রিল থেকে ৩৫ বছরের কম বয়সীদের হজে নিষিদ্ধ করে তাজিকিস্তান সরকার। দেশটির ৮৫ লাখ জনসংখ্যার অধিকাংশই মুসলিম। তবুও প্রেসিডেন্ট বারবারই ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য একের পর এক আইন পাস করে যাচ্ছেন। এর আগে পুরুষদের আরবি কায়েদাতে দাড়ি রাখা ও নারীদের হিজাব নিষিদ্ধ করেছে তাজিকিস্তান সরকার। তাজিকিস্তানের ৯৫% মানুষ মুসলিম হওয়া সত্যেও নাবালকদের মসজিদে ঢোকাও নিষিদ্ধ। তাজিকিস্তান সরকার মনে করে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কোন অঞ্চলকে ধর্মনিরপেক্ষ করে রাখার পথে সব থেকে বড় বাধা ইসলাম ধর্ম নয়ে, আরবদের বর্বর সংস্কৃতিকে অন্ধ ভাবে হুবাহু অনুসরণ করা। তাছাড়াও তাজিকদের নিজেদেরও অতি উন্নত এবং সুপ্রাচীন সংস্কৃতি রয়েছে।

No comments:

Post a Comment

loading...
loading...