কলকাতাঃ- একদিকে ডোকলাম আর একদিকে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাক-চিন উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন ইংল্যান্ডের এক কলেজে চলা বিতর্ক অনুষ্ঠানে কিছু তথ্য সমেত চাঞ্চল্যকর দাবি করা হল। সেই দাবি অনুযায়ী রাশিয়া এবং আমেরিকার পর ভারতেই নাকি সব থেকে বেশি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড রয়েছে। ভারত নাকি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের সংখ্যাতে পৃথিবীতে তৃতীয়। বিষয়টি এখনও দাবির মধ্যে থাকলেও, ঐ দুই ভারত বিরোধী দেশের ঘুম কেরে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
অনেকটা এই রকমের দাবিই বেশ
কিছুদিন ধরে করে আসছিল পাকিস্তান। কাশ্মীরে পাকিস্তানের উস্কানির পালটা জবাব ভারত
যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দিয়ে চলেছে, তাতে ধর্মীয় মৌলবাদকে মদত দেওয়া পাকিস্তান এমনিতেই বেশ চিন্তিত। ৮০-র দশক থেকে শুরু
হওয়া ধর্মীয় উগ্রবাদী আন্দোলনের জবাব এভাবে এর আগের ভারত কোন সরকার দেয়নি। এমতাবস্থায় ভারত ২৬০০ টি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে
সক্ষম হওয়ার(মতান্তরে মজুত রয়েছে) খবরটি পাকিস্তানকে আরও অনেক বেশি শঙ্কিত করলো। শুধু শঙ্কিত বলাটা ভুল, রীতিমত এই শঙ্কায় কাঁপছে গোটা পাকিস্তান।
পাকিস্তানের বিদেশ দফতরের
মুখপাত্র নাফিস জাকারিয়া ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের কাছে
অভিযোগ করে বলেছেন, "২০০৮-র ভারত-মার্কিন পরমাণু
চুক্তির আওতায় ভারতে আমদানিকৃত পরমাণু জ্বালানি, সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি অন্য উদ্দেশে সরিয়ে ফেলা হতে পারে। এবিষয় নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়ে
পাকিস্তান"। এনএসজিতে ভারত যাতে কখনও ঢুকতে না পারে সেজন্যেও জোরাল দাবিও তুলেছেন নাফিস জাকারিয়া। কারণ তার মতে, ভারত যদি এনএসজিতে ঢুকে পড়ে তাহলে দক্ষিণ এশিয়াতে আরও উত্তেজনা বাড়বে। যদিও অন্য কোন দেশ থেকেই
ওনার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে, ভারতকে এনএসজিতে ঢুকতে না দেওয়ার জন্য জোরালো সওয়াল
করা হয়েনি।
লন্ডনের
কিংস কলেজে ঠিক কি বলা হয়েছিল? সেখানে বিতর্ক সভাতে বিশেষ
কিছু তথ্য দিয়ে আলফা প্রোজেক্টের থেকে দাবি করা হয়েছে ভারতে ২৬০০টি পরমাণু ওয়ারহেড রয়েছে। রাশিয়া এবং আমেরিকার পরই
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। উল্লেখ্য ৫০ থেকে ৮০-র দশকের মধ্যে শীতল যুদ্ধের সময়
সোভিয়েত ও আমেরিকা এই দুই দেশ মিলিয়ে প্রায়ে ২০ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার
ওয়ারহেড মজুত করে। ১৯৮৯-এ সোভিয়েত ভেঙে রাশিয়াতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে, আমেরিকা
ও রাশিয়া উভয়ই কিছু পরিমাণ নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড নষ্ট করে দেওয়া শুরু হয়ে। এরপরেও
রাশিয়ার কাছে সাড়ে সাত হাজার এবং আমেরিকার কাছে ছয় হাজারের মতো ওয়ারহেড রয়েই
গেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
লন্ডনের কিংস কলেজে আরও দাবি করে বলা হয়েছে এই মুহূর্তে ব্রিটেন এবং
ফ্রান্সের মত শক্তিশালী দেশের থেকেও বেশি পরিমাণের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড এবং সেগুলো
বহনকারী মিশাইলের সংখ্যাতেও ভারত এগিয়ে। ২০২২ সালের মধ্যে ভারত সমুদ্রে তিনটে
নিউক্লিয়ার সাবমেরিন নামানোর লক্ষ্য নিয়ে চলেছে। এর সঙ্গে কানাঘুষো খবর, আগামি
দিনে আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিউক্লিয়ার পাওয়ার এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার তৈরি
করতে পারে ভারত। যদি এই খবর গুল সত্যি হয়ে থাকে তবে অতি দ্রুত আমেরিকা বাদে বাকি
সব ন্যটোর দেশের থেকে শক্তিশালী নৌ-বাহিনী থাকবে ভারতের এবং এইসব দেশের থেকে বেশি সংখ্যায় পরমাণু হাতিয়ার বহনের ক্ষমতা সম্পন্ন হবে ভারতীয় নৌ-বাহিনী।
বর্তমানে সরকারি হিসাব অনুযায়ী চিনের কাছে ২৭০, পাকিস্তানের ১৩০ এবং ভারতের কাছে ১২০ টা পরমাণু বোমা রয়েছে। তবে এইসব বিতর্কের সময় করা দাবিটা সঠিক প্রমাণ হলে হিসেবটাই বদলে যাবে। যদিও নতুনদিল্লীর তরফ থেকে কোন প্রতিক্রিয়াই দেওয়া হয়েনি। তারা যেমন বিষয়টা স্বীকার করেনি,
তেমন বিষয়টা-কে সরাসরি অস্বীকার-ও করেনি। আর এতেই সন্দেহ এবং শঙ্কা আরও গভীর হয়ে
উঠেছে পাকিস্তান এবং চিনের মত ভারত বিরোধী দেশ গুলোর।
No comments:
Post a Comment