রিয়াধ ও কলকাতাঃ- কনের বয়্স
যত কম হবে‚ তত বেশি পণ পাবেন মেয়ের বাবা। অদ্ভুত এই প্রথাটি প্রচলিত আছে আরবের উপদ্বীপের বিভিন্ন দেশে। এমনই এক দেশ ইয়েমেন। আর প্রচলিত এই ‘লোভনীয়’ সুযোগ হাতছাড়া করতে চান
না ইয়েমেনের অনেক গরিব বাবাই। যেমনটা চাননি ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের
রাতান প্রদেশের আট বছর বয়সী শিশু রাওয়ানের বাবা মামেদ আলীও। কিছু অর্থের
জন্য বয়সে কয়েক গুণ বড় পাশের গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন মেয়েকে।
যার সঙ্গে শিশু রাওয়ানের বিয়ে হয়েছিল সেই বরের বয়স ছিল ৪০ বছর।
যুক্তরাজ্যের
সংবাদমাধ্যম দি ইনডিপেনডেন্টে ক'দিন আগেই প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়,
২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী ইয়েমেনের হারদ গ্রামে এই ঘটনা ঘটেছে। সেদিন জোর করে রাওয়ানকে ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির সঙ্গে
বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় ঘুমিয়ে পড়েছিল ছোট্ট রাওয়ান। এরপর
বরের কোলে চেপেই শ্বশুর বাড়ি যায় ঘুমন্ত শিশুটি। সেদিনের সে ঘুম যে চিরঘুম
হবে, তা হয়তো বুঝতে পারেননি ছোট্ট মেয়েটির দুর্ভাগা বাবা। পরের দিন খবর পান
বিয়ের রাতেই মারা গেছে শিশু রাওয়ান।
শিশু
রাওয়ানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেরদিন থানা-পুলিশ করে ময়নাতদন্ত করিয়েছিলেন
বাবা মামেদ আলী। সেখানেই জানা যায়, বিয়ের রাতে ‘ধর্ষণের’ ফলে ‘অভ্যন্তরীণ
রক্তক্ষরণে’ মারা গেছে শিশুটি। রাওয়ানের
মৃত্যুর পরপরই অবশ্য বিষয়টি তেমনভাবে গণমাধ্যমের সামনে আসেনি। ঘটনাটি সামনে
আসে গত বছরের ২৬ মার্চ ইয়েমেনে সৌদি আরবের বিমান হামলা শুরুর পর। সে সময়
রয়টার্সের সাংবাদিক পল অ্যালান রাতান প্রদেশে গিয়ে এই দুর্ভাগ্যজনক
বাল্যবিবাহটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
আর এই
প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সবাই এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাটির বিষয়ে জানতে পারে।
এরপর যথারীতি তীব্র ধিক্কার ওঠে সামাজিক গণমাধ্যমজুড়ে। সবারই দাবি ছিল,
গ্রেপ্তার করা হোক রাওয়ানের বাবা-মা এবং ওই ৪০ বছর বয়সী বরকে। যাতে ওই
এলাকায় শিশুবিবাহের মতো জঘন্য প্রথা বন্ধ হয়।
কিন্তু
সামাজিক গণমাধ্যমের লেখা পর্যন্তই সার। শুরু হয়ে আবার থেমেও গেছে এই
প্রতিবাদ। কাজের কাজ হয়নি কিছুই। কারণ আরব উপদ্বীপের কট্টর পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কম বয়সী মেয়েদের ভোগ করার মতো রীতির বিরুদ্ধে যেতে নারাজ। সম্প্রতি ইনডিপেনডেন্টের প্রতিবেদক হারদ
গ্রামে গিয়ে দেখেন, দরিদ্র পরিবারগুলোতে এখনো হরদম চলছে শিশুবিয়ের প্রথা।
সৌদি সীমান্তে বাস করা বেদুইন উপজাতি গুলোর মধ্যে এই প্রথা সবচেয়ে বেশি
প্রচলিত। তারা বিশ্বাস করে‚ স্ত্রী যত অল্পবয়সী হবে‚ তত বেশি বাধ্য থাকবে।
আর তত বেশিদিন এবং বেশি করে সন্তানধারণ করতে পারবে।
ইনডিপেনডেন্টের
প্রতিবেদনে জানা যায়, ইয়েমেনের আইনে মেয়েদের বিয়ের জন্য কোনো বয়স নির্ধারণ
করে দেওয়া নেই। বাবা-মা স্থির করলেই তাঁদের মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন। আর
তাই বিভিন্ন বেসরকারি সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর অনেক চেষ্টার পরও বাল্যবিবাহ
বন্ধ হচ্ছে না দেশটিতে। আর রাষ্ট্রের এই ‘ভুল নীতির’ শিকার হচ্ছে রাওয়ানের
মতো মেয়েশিশুরা।
তথ্যঃ- এইবেলা
No comments:
Post a Comment