ওয়েবডেস্কঃ- মায়ানমারের
রাখাইন অঞ্চলে গত সপ্তাহে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংর্ঘষে প্রায়ে ১০০ জন নিহত হয়েছে। গত শুক্রবার ভোরের আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমদের একটি দল আক্রমণ করে রাখাইন অঞ্চলের একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে। দ্য আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (এআরএসএ) শুক্রবারের হামলার দায় স্বীকার করে আরো হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছিল।
মায়ানমারের নেত্রী নোবেল জয়ী আন সাং সুচি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
মায়ানমার সরকারী মুখপত্র বারাত দাইয়ে জানায়, শনিবারও রাখাইনের বিভিন্ন এলাকায় সংর্ঘষ ছিল অব্যাহত। আন সাং সুচি-র কার্যালয় জানিয়েছে, সংর্ঘষের ফলে এক সৈন্য এক অভিবাসন কর্মকর্তা এবং ১০ জন
পুলিশ কর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭৫-র বেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিম মারা
গেছে বলেও যানা গেছে।
রাখাইনে
হামলার মাত্র একদিন আগেই সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া এবং মৌলিক
অধিকার রক্ষার জন্য মায়ানমার সরকারের কাছে আবেদন জানায়, রাখাইন প্রদেশের
জন্য গঠিত "অ্যাডভাইজরি কমিশন"। রাষ্ট্রপুঞ্জের ভূতপূর্ব মহাসচবি কোফি আন্নানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন প্রতিবেদনে আরো জানায়, এই বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকারের প্রতি
সম্মান না দেখালে রোহিঙ্গা এবং বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী কট্টরপন্থার দিকে আরও এগিয়ে যাবে।
এই অশান্তির ফলে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে একাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম। বর্ডার
গার্ড বাংলাদশে (বিজিবি) ১৪৬ জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে বলে যানা গেছে। মিয়ানমারের
সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাত একটার দিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমরা ঘরে তৈরি দেশি বোমা দিয়ে, রাখাইন প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের মংডুর বেশ
কয়েকটি পুলিশ পোস্টে হামলা চালায়ে। সামরিক সূত্র জানায় এক হাজারের বেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী মংডু ও বুথিডং জেলার বিভিন্ন এলাকার হামলায় অংশ নিয়েছিল। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একাধিক চেকপোস্ট আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। রাখাইনের এই হামলা গুলোর দায় স্বীকার করে এআরএসএ
বলেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরো হামলা চালানো হবে। গত বছররে অক্টোবরের পর রাখাইন-এ এটি
সবচেয়ে বড় হামলা। সেনাও জানিয়েছে যে তারা এর শেষ দেখেই ছাড়বে।
প্রসঙ্গত বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে মায়ানমারের মানুষদের লড়াই বহু দশকের। ব্রিটিশদের সময় থেকেই এই সংঘর্ষ চললেও ব্রিটিশ পরবর্তী যুগে এর সূত্রপাত হয় মূলত ধর্মীয় কারণে মায়ানমারের রোহিঙ্গা প্রদেশকে মায়ানমার থেকে আলাদা করার দাবির জন্য। রোহিঙ্গা মুসলিমরা ভারত ভাঙ্গার কায়েদাতেই মায়ানমারকেও ধর্মের অজুহাতে ভাঙতে চেয়েছিল। এমনকি ভারত ভাঙ্গার কারিগর মহঃ আলি জিন্নাহ-কেও তারা চিঠি লিখে জানিয়েছিল যে তারা মুসলিম দেশ পাকিস্তানের সঙ্গেও যুক্ত হতে চায়ে। পরবর্তীকালে
অনেকটা ভারতের কাশ্মীরের কায়েদাতেই ভিনধর্মী মুক্ত রাখাইন প্রদেশ তৈরির জন্য নিরীহ শান্তিপ্রিয় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। ঐ অঞ্চলের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের ওদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠার পর মায়ানমার সরকার ১৯৮২ সালে ওদের নাগরিকত্বই কেরে নেয়। তখন থেকেই বিচ্ছিন্নতা কামী এই রোহিঙ্গা মুসলিমরা রাষ্ট্রহীন একটি মানব গোষ্ঠী।
No comments:
Post a Comment