Saturday 26 August 2017

বিতর্কিত ভাসান নির্দেশিকা, হিন্দুদের পাশে ত্বহা, মমতার পাশে বামেরা?!!


ওয়েবডেস্কঃ-  সাম্প্রদাইক সম্প্রীতির নজির গড়ল ফুরফুরা-শরীফের প্রধান, পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে মহরম ও প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে যে ফরমান জারি করেছেন তা নিয়ে বিতর্ক হয়েই চলেছে। রাজ্য বিজেপি-র তরফ থেকে জানানো হয়েছে এই ফরমান অসংবিধানিক, কোন ভাবেই এক ধর্মের উৎসবের অজুহাতে অন্য ধর্মের উৎসব-র উপর সরকার এভাবে নিয়ম-নির্দেশিকা চাপাতে পারে না। সরকার এই ফরমান না বদলালে বিজেপি-র তরফ থেকে কোর্টে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এবার বিজেপি-র এই দাবিকেই সমর্থন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খুললেন মুসলিম সমাজের একাধিক গণ্যমান্য ব্যাক্তি। তাদের মধ্যে অন্য তম ফুরফুরা-শরীফের প্রধান, পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি।

  ৩০শে সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমীর দিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ ১লা অক্টোবর পর্যন্ত কোন প্রতিমা বিসর্জন করা যাবেনা বলে সরকারী বিজ্ঞপ্তি ও  জারি করা হয়েছে। কারণ হিসাবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র মহরমকে প্রকাশ্যে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু যাদের জন্য এতকিছু তারাই যে এভাবে প্রতিবাদ করবে সেটা হয়ত ভাবতেই পারেনি  তৃণমুল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। 

   ফুরফুরা শরিফের পিরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি টাইমস্ বাংলাকে বলেন – “কোরানের কথা অনুযায়ী তুমি তোমার ধর্ম করো অন্যকে তার ধর্ম করতে দাও, অর্থাৎ ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। সে মহরমের দিন বিসর্জন হোক, কিম্বা ঈদের দিনে বিসর্জন হোক মুসলমানদের এতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।”

  একটু এগিয়ে পিরজাদা আরো বলেন- "যদি দুর্গাপুজোর সময় ঈদ পড়ে আর সেই ঈদ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি ভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় তাহলে মুসলিম জনমানসে তার কি প্রভাব পড়তে পারে সেটা আগে আমাদের ভাবা উচিত। রাজ্য প্রশাসন দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে কোন আঘাত না হেনে সাম্য ও সম্প্রীতির বাংলায় নিজ নিজ ধর্ম পালনে সহযোগিতা করবে এটাই আশা রাখি"।

  অন্যদিকে রাজ্যের শিয়া সম্প্রদায়ের প্রধান সাঈদ ফিরোজ হোসেন জাইদি  বলেন - "মুসলিমরা মহরমের জন্য অন্য কোন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয়। আমরা এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোন আবেদনও করিনি। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের এটা একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত"। তিনি আরও বলেন-"আমরা যে ধর্মগ্রন্থকে মেনে চলি সেই পবিত্র কোরান যখন উভয় সম্প্রদায়কে মিলে মিশে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনের ছাড়পত্র দিচ্ছে, তখন আমি আপনি কে সে বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার? এটা রাজ্যর প্রশাসনিক দুর্বলতার কথা মাথায় রেখে মমতা ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত একটি সিদ্ধান্ত, এর সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন সম্পর্কই নেই"।

  এই রাজ্যে ৩৪ বছর রাজত্ব্য করা বামেদের সময়ও দুর্গাপূজার গায়ে গায়ে মহরম প্রতি বছরই হত। কোন বছরই মহরমের কারণে দুর্গাপূজা-র ভাসানের জন্য আলাদা ভাবে কোন নির্দেশিকা জারি করার দরকার পরেনি। তবে মমতা ব্যানার্জীর এই বিতর্কিত নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আপাতত বাম-দল গুলোর তরফ থেকে অফিসিয়ালি কোন বিরোধিতাই করা হয়েনি। এমন কি বিমান বা সূর্য বাবুদের টিভি বাইটেও এর বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা জায়েনি। এর কারণ হিসাবে অনেকেই অবশ্য বলছেন, পালে হাওয়া লাগানোর জন্য বামেরা মমতার মতই প্রকাশ্যে তোষামোদের রাজনীতি করা শুরু করেছে। আবার অনেকে প্রশ্ন তুলেছে, কানহাইয়া রাজ্যে এসে মমতা বন্দনা করে বাম-তৃণমূল জোটের যে আভাস দিয়েছে, সেই রেষ ধরেই কি বামেরা এই নির্দেশিকার বিরোধ না করে উল্টে তৃণমূল সরকারকে নিরব সমর্থন দিচ্ছে?

No comments:

Post a Comment

loading...
loading...