Wednesday 30 August 2017

ডোকলামে কী ভারতের নৈতিক জয় হল?



ওয়েবডেস্কঃ- কয়েকদিন আগে থেকে ভারত ও চিনের সেনা ডোকলাম ছাড়া শুরু করেছে। শেষ হয়ে গেল প্রায়ে তিন মাস ব্যাপি দুই সুপার পাওয়ারের মুখোমুখি অবস্থান। দুই দেশেরই পিছিয়ে যাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে ভুটান। কারণ এই দুই দেশের সেনার মুখোমুখি অবস্থান ঘটেছিল ভুটানের অন্তর্গত ডোকলাম উপত্যকাতেই।

  কিন্তু এই অবস্থান শেষ হওয়ার পর কয়েকটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভারত কি হেরে ফিরলো ডোকলাম থেকে? ১৯৬২-র মতই চিন কি জিতে গেল? ভারত যে দাবি নিয়ে ডোকলামে সেনা পাঠিয়েছিল তার কতটা পূরণ হল?

  এইসব প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আগে মনে রাখা উচিৎ, ডোকলামে কিন্তু কোন যুদ্ধ হয়েনি, শুধুমাত্র যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তাই ভারত বা চিন জিতলো না হারলো এই প্রশটাই অবান্তর। আসলে প্রশ্ন হওয়া উচিৎ কার দাবি মান্যতা পেল, কারণ দুই দেশই নির্দিষ্ট কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে ডোকলামে সেনা পাঠিয়েছিল।

  ভূটানের অংশ ডোকলামে সমস্যা তৈরি হয়ে চিন গায়ের জোরে ঐ অঞ্চলের দখল নিতে চাইলে। মে মাসের শেষ ও জুন মাসের প্রথমে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের অংশ বলে দাবি করা ভূটানের অংশ ডোকলামে চিন সেনা পাঠিয়ে রাস্তা তৈরি করতে চায়ে। ভুটানের তরফ থেকে ভারতকে আবেদন করা হয়ে, চিনের এই আগ্রাসন থেকে তাদের রক্ষা করতে। জুনের মাঝামাঝি সময় প্রতিবেশি মিত্র দেশের আবেদন মেনে নিয়ে ভারত সেনা পাঠিয়ে চিনের রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ করে দেয়, আর তখন থেকেই ভারত ও চিনের সেনা ডোকলামে মুখোমুখি অবস্থান করেছে। 

  ভারত প্রথম থেকেই বলেছে, রাস্তা তৈরি বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হবে কারণ এই রাস্তা তৈরি করলে চিন সেনা উত্তরবঙ্গের জলপাইগুরির কাছে চিকেন নেক-কে বেকার করে বাকি-ভারতের সঙ্গে গোটা উত্তরপূর্ব ভারতকে বিচ্ছিন্ন করে খুব সহজেই দখল করে নিতে পারে। চিন বরাবর বলে এসেছে ওরা না তো রাস্তা তৈরি বন্ধ করবে, না তো কোন আলোচনাতে যাবে। নিঃশর্ত ভাবে ভারতকে সেনা সরাতে হবে। একের পর এক হুমকিও চিন জারি করেছিল ভারতের বিরুদ্ধে। কূটনৈতিক ভাবে একাধিক দেশকেও পাশে পাওয়ার বিফল প্রচেষ্টাও করেছিল। কোন কিছুতেই কিছু না হওয়াতে শেষে এক রকম বাধ্য হয়েই ডোকলাম থেকে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে চিন। আপাতত রাস্তা তৈরি হওয়ার সম্ভবনা না থাকার জন্য ভারতও সেনা সরিয়ে নিচ্ছে ডোকলাম থেকে।

  চিনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, “জলবায়ুগত এবং অন্য বিশেষ কিছু কারণ”-র জন্য আপাতত চিন ঐ অঞ্চলে রাস্তা তৈরি করবে না। জলবায়ুগত কারণ ছাড়াও এই অন্য বিশেষ কিছু কারণ-টা কি সেটাই যত জল্পনার সৃষ্টি করেছে। অনেকের মতে এটা অন্য কিছুই না চিন বুঝে গেছে ১৯৬২-র ভারত আর নেই। দেশ ও দেশের বাইরে ভারত এখন অনেক শক্তিশালী। এই ভারতকে হারানো সহজ নয়ে। তাই বুদ্ধিমান চিন, ভারতের দাবিকেই ঘুর পথে মান্যতা দিয়ে আপাতত ভুটানের ঐ অঞ্চলে জোর করে রাস্তা তৈরি থেকে বিরত থাকছে। ডোকলাম সমস্যার এই রকম ভাবে শেষ হওয়াতে কিন্তু ভারতের নৈতিক জয়টা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

No comments:

Post a Comment

loading...
loading...