ওয়েবডেস্কঃ- মায়ের জটিল
ব্যারাম। বাবার আর্থিক সঙ্গতিও ভাল নয় | খুলনার বাড়িতে বেশি থাকা হয় না
ছেলেটির | ভাইবোনদের সঙ্গে আশ্রিত মামাবাড়িতে‚ ডায়মন্ড হারবারের নেত্রায় |
মাকে আর পাওয়া হল না বেশিদিন| যেটুকু চিকিৎসা হয়েছিল‚ ডাক্তার বদ্যি ধরতেই
পারল না ব্যামো | প্রায় বিনা চিকিৎসায় চলে গেলেন তিনি | যশোর থেকে বসবাস
উঠিয়ে খুলনায় থাকা তাঁর স্বামী বিশেষ কিছুই করতে পারলেন না | নেত্রায় যে
মামাবাড়িতে জন্ম হয়েছিল ১৮৬১ সালের ১ অক্টোবর‚ সেটাই হয়ে গেল মাথা গোঁজার
ঠাঁই |
শৈশবে
মাতৃবিয়োগের এই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারেননি নীলরতন | পণ করেছিলেন এমন
পড়াশোনা করবেন যাতে জটিল অসুখের সব মন্ত্রগুপ্তি থাকে নখদর্পণে | ছিলও তাই |
ছোট্ট নীলুর জগৎজোড়া খ্যাতি অপার্থিব জগৎ থেকে দেখেছিলেন তাঁর মা | জীবিত
থাকলে পরিচিত হতেন স্যর নীলরতন সরকারের গর্বিত মা হিসেবে | নুন আনতে
পান্তা ফুরোয় সংসারে | তবু জেদ ধরে কলকাতায় চলে এসেছিলেন নীলরতন | ছাতরা
নন্দলাল ইনস্টিটিউট থেকে এন্ট্রান্স পাশ করে | এক ব্রিটিশ সাহেব টের
পেয়েছিলেন ছাই চাপা আগুনের আঁচ | বহন করেছিলেন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজে
তাঁর পড়ার সব খরচ | ১৮৮৮ সালে এম বি ডিগ্রি‚ ১৮৯০ সালে এম ডি |
১৮৮৮ সালেই
বিবাহ | ব্রাহ্মনেতা গিরীশচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে নির্মলাকে | নিজেও গ্রহণ
করেন ব্রাহ্ম ধর্ম | দুজনের পাঁচ কন্যা ও এক পুত্র | এক মেয়ে কল্যাণীর
সঙ্গে আর এক কিংবদন্তি চিকিৎসক তথা বাংলার দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রণয়ের
অবশ্য কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই | শোনা যায়‚ কল্যাণীর পাণিপ্রার্থী
বিধানচন্দ্র রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন স্যর নীলরতন | তখনও যশ খ্যাতি
থেকে বহুদূরে ছিলেন তরুণ চিকিৎসক বিধানচন্দ্র | আর বিয়ে করেননি তিনি |
পরিকল্পিত নগরীর নাম দিয়েছিলেন কল্যাণী |
নীলরতন
মেয়ের নাম রেখেছিলেন কল্যাণী | স্বনামধন্য চিকিৎসক হয়েও নিজে আজীবন কাজ করে
গেছেন শিক্ষাপ্রসারের কল্যাণসাধনে | বোস ইনস্টিটিউট‚ কারমাইকেল মেডিক্যাল
কলেজ ( আর জি কর কলেজ ও হাসপাতাল )‚
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স কলেজ‚ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়‚ ইন্ডিয়ান
অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স-সহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের
সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি |
নিজেকে
দূরে সরিয়ে রাখেননি স্বাধীনতা আন্দোলন থেকেও | ১৮৯০ থেকে ১৯১৯ অবধি টানা ২৯
বছর জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর‚ মতিলাল নেহরু‚
মহাত্মা গান্ধী‚ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস‚ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস‚
জগদীশচন্দ্র বোসের মতো ব্যক্তিত্বের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন | আবার স্বদেশী
আন্দোলনে যোগ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন সাবান কারখানা ও ট্যানারি |
ব্রিটিশ
বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও ভূষিত হয়েছেন ব্রিটিশদের দেওয়া স্যর
উপাধিতে | চিকিৎসাশাস্ত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯১৮-র ২৬ জুন লাভ
করেছিলেন নাইটহুড | দেশের স্বাধীনতা অবশ্য দেখে যেতে পারেননি | ১৯৪৩-এর ১৮
মে প্রয়াত হন ৮১ বছর বয়সে | তাঁকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল
কলেজের নতুন নামকরণ হয় নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল |
ধন্যবাদ- banglalive
No comments:
Post a Comment