Thursday 12 October 2017

যে চার ভয়ঙ্কর মিশাইল থাকছে স্বদেশীয় তেজাসে

ওয়েবডেস্কঃ- যে কোনো ফাইটার বিমানের জন্য তার প্রধান ও অদ্বিতীয় অস্ত্র হল তার এয়ার টু এয়ার মিসাইল। আপনার ইঞ্জিন এর ক্ষমতা, স্পিড, ম্যনুয়েভারেবিলিটি, এভিয়নিক্স ও অন্যান্য সমস্ত কিছু যুদ্ধে আপনাকে যুদ্ধ লড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে সুবিধা করে দেবে। কিন্তু দিনের শেষে আপনাকে শত্রুপক্ষের বিমান ধ্বংস করার জন্য বিমানের বিধ্বংসী ক্যানন ও মিসাইল লাগবে। যেমন উন্নত মিসাইল একটি অনুন্নত বিমানের এফেক্টিভনেসকে অনেকটাই বারিয়ে দেয়, তেমনই উন্নত বিমানে ভালো এয়ার টু এয়ার মিসাইল না থাকলে সেটি যেন বিষ দাঁত ভাঙ্গা কেউটের মত শুধু ফঁস ফঁস ই করে। ধন্যবাদ দিতে হবে ভারতের মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স কে। কারন আমাদের লিটিল বয় তেজসের প্রতিটি এয়ার টু এয়ার মিসাইলই অত্যন্ত আধুনিক। 

কি কি এয়ার টু এয়ার মিসাইল ব্যবহৃত হতে চলেছে স্ব-দেশীয় যুদ্ধ বিমান তেজসে?
  #শর্ট রেঞ্জ

আর-৭৩ ক্লোজ কাউন্টার মিসাইল-

রাশিয়ার বানানো এক যুগান্তকারি মিসাইল। যদিও রাশিয়ান এয়ার টু এয়ার মিসাইল গুণগত ভাবে খুব একটা ভাল হয়েনা, তবুও সোভিয়েত আমলের শেষ লঘ্নে তৈরি এই মিসাইলটি আজও বিশ্বের কাছে ত্রাস। এই মিসাইলকে রাশিয়া “ভ্যম্পেল” ন্যটোরা “আর্চার” বলে ডাকে। ১৯৮৪সালে সার্ভিসে আসে মিসাইলটি। ওজনে ১০৫কেজি। ২.৯৩মিটার লম্বা ও ৭.৫কেজি বিষ্ফরক বহন করে। সলিড ফুয়েল্ড রকেট মটরের সাহায্যে এটি ম্যাক ২.৫ গতীতে যেতে পারে। পুরো মিসাইলটি ইনফ্রারেড সিকার দিয়ে গাইড হয়। রেঞ্জ-৩০ কিমি। এগুলির জন্য টার্গেট তেজসের পাইলট তার হেলমেট মাউন্টেড ডিসপ্লে দিয়ে লক করতে পারে। শুধু টার্গেটের দিকে তাকালেই টার্গেট লক হবে। অথবা মিসাইল লঞ্চ হওয়ার আগে এর ইনফ্রারেড সিকারই একে লক করবে। 

তেজস ছাড়াও মিগ-২৯ইউপিজি, নৌবাহিনীর মিগ-২৯কে, মিগ-২১, সু-৩০এমকেআই, মিগ-২৭ ব্যবহার করে।

#মিডিয়াম রেঞ্জ

এইম-১৩২ বা অ্যাসরাম-

 ফ্রান্সের এমবিডিএ তৈরি করেছে এই মিসাইল। শর্ট রেঞ্জ থেকে মিডিয়াম রেঞ্জের মিসাইল। ৫০কিমি রেঞ্জের মিসাইলটি পাইথন-৫ এর জায়গায় নেওয়া হয়েছে তেজসের জন্য। পাইথন অত্যন্ত ভয়ংকর হওয়া সত্যেও তেজস থেকে লঞ্চ করার সময় অত্যন্ত ভাইব্রেশান হচ্ছিল। এছাড়া পাইথনের সার্ফেস কন্ট্রোল বেশি, যেখানে অ্যাসরাম ডিজিটালি কন্ট্রোলড। ৮৮কেজি ওজনের মিসাইলটি ২.৯০মিটার লম্বা। ১০কেজি বিস্ফোরক নিয়ে ম্যাক ৩+ গতীতে যেতে পারে। এটি আর-৭৩ এর মত ইনফ্রারেড গাইডেড। রেঞ্জ ৫০কিমি। এটিতে লক অন আফটার লঞ্চ সিস্টেম আছে। অর্থাৎ টার্গেটের দিকে লঞ্চ করে দেওয়ার পর টার্গেট লক হয়ে যায়। ভারত ইতিমধ্যে ৩৮৪টি অ্যাসরাম মিসাইল জাগুয়ারের জন্য কিনেছে। 

অ্যাসরাম কে এফ-৩৫ বিমানেও লাগানো হবে।

#বিয়ন্ড ভিজুয়াল বা দৃষ্টি ক্ষমতার বাইরে রেঞ্জ মিসাইল

অস্ত্র বিভিআরএম-

সম্পূর্ণ ভারতে তৈরি বিভিআর মিসাইল অস্ত্র। অস্ত্র ডিআরডিও এর তৈরি সবচেয়ে ছোট ও অত্যাধুনিক বিভিআর মিসাইল। মিসাইলটি ইতিমধ্যে ডেভেলপমেন্ট ট্রায়াল শেষ করে লিমিটেড প্রোডাক্সানে গেছে। ৩.৫মিটার লম্বা মিসাইলটি ১৫৪কেজি ভারী। অস্ত্র ১৫কেজি ওয়ারহেড নিয়ে ম্যাক ৪.৫গতীতে উড়তে সক্ষম। সলিড রকেট মটর চালিত মিসাইলের রেঞ্জ ১১০কিমি। সর্বোচ্চ ৬৬,০০০ফুট উচ্চতায় অস্ত্র উড়তে সক্ষম। এটা ভারতের তৈরি Ku Band রেডার ফ্রিকুয়েন্সি এক্টিভ রেডার হোমিং সিকার চালিত। এই মিসাইলে HTPB ফুয়েল ব্যবহার করা হয়। এতে কোনো ধোয়ার সৃষ্ট হয়না। ফলে এর হিট সিগনেচার কম হয় ও এর গতীপথ বোঝা যায়না। এই মিসাইলের অপর একটি গুন হল এতে অত্যাধুনিক ECCM প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির ফলে অস্ত্রকে জ্যম করা সম্ভব হয়না। ট্রায়ালের সময় ইজরায়েলে তৈরি জ্যমারও একে জ্যাম করতে ব্যর্থ হয়। এতে LOAL এবং LOBL পদ্ধতিতে টার্গেট লক হয়। 

এটি তেজস ছাড়াও সুখোই, রাফাল, মিগ-২৯ইউপিজি ও মিরাজ-২০০০ বিমানেও লাগানো হবে।
 

আই ডারবি-

আই ডারবি হল পাইথন মিসাইলের বিভিআর ভার্সান। রেডার ও মিসাইল প্রযুক্তিতে বর্তমানে ইজরায়েলের জুড়ি মেলা ভার। আই ডারবি হল সাধারণ ডারবি মিসাইলের আপ-গ্রেডেড ভার্সান। আই ডারবি তে আয়রন ডোম মিসাইলের সিকার ব্যবহার করা হয়েছে। ১০০কিমি পাল্লার মিসাইলটিও LOAL ও LOBL পদ্ধতি তে কাজ করে। আই-ডারবি সিস্টেমে একটা দারুন সুবিধা আছে। অন্যান্য মিসাইলের মত সলিড মটরের বদলে ডুয়েল পালস মটর ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ মিসাইলে দুটি মটর আছে। একটি মিসাইলের শেষে অপরটি মিসাইলের মাঝখানে। প্রথমে শেষের মটরটি শুরু হয়। প্রথমে শেষের ও মাঝের মটরের মাঝখানে থাকা ফুয়েল বার্ণ হয়। টার্গেটের কাছে গিয়ে শেষের মটরটি বন্ধ হয়ে মিসাইল থেকে আলাদা হবে। ও মাঝের মটর শুরু হবে।

ডুয়েল পালসের সুবিধা অত্যন্ত বেশি। কারন অন্যান্য মিসাইল যত দূরে যায় তত ম্যনুয়েভারেবিলিটি কমে। কিন্তু আই ডারবির যত দূরে যায় তার ম্যনুয়েভারেবিলিটি বাড়ে।

No comments:

Post a Comment

loading...
loading...